শঙ্কু সাঁতরা:সিরিয়াল কিলাররা কি মানসিক রোগী হয়? নাকি তারা কারোর উপর ভরসা করতে পারে না? এ পর্যন্ত যতগুলো সিরিয়াল কিলার ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দেখা যায়, তারা কোন না কোন ভাবে মানসিক রোগে ভোগে। তবে এবারও আরেক ভয়ংকর সিরিয়াল কিলারের সন্ধান পেল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি।
১৯ শে নভেম্বর হাওড়া স্টেশনে ডাউন কাটিহার ট্রেনের বাঙ্কার থেকে এক তবলা বাদকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।পরিচয় জানা যায়,হাওড়া বালির ঘোষ পাড়ার বাসিন্দা বিশেষভাবে সক্ষম তবলা বাদক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দেহ। তারপরে হাওড়া জিআরপির পক্ষ থেকে রীতিমতো তদন্তে নেমে পড়ে পুলিশ। পরিবারের কাছ থেকে জানা যায় তবলা বাদকের যে মোবাইল ফোনটি ছিল ,সেটি নেই। তারপর পুলিশ ওই মোবাইল নম্বরটি ট্র্যাকিংয়ে বসায়।
১৯শে নভেম্বর রাত থেকে সৌমিত্র বাবুর ফোনটি বন্ধ ছিল। ২০ তারিখ টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় অন্ধ্রপ্রদেশে অন্যাকুলামে, তারপর ২১ তারিখ লোকেশন পাওয়া যায় তামিলনাড়ুতে। তামিলনাড়ুর সেলেম স্টেশনে গিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবার গুজরাটে টাওয়ার লোকেশ পাওয়া যায়। সেলেম থেকে কিভাবে গিয়েছে গুজরাটে ?সেটা এখনো স্পট নয়।
অন্যদিকে জিআরপি হাওড়া জানতে পারে,১৯ বছরের এক কলেজ পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের তদন্তে নেমে গুজরাটের পারদি থানার পুলিশ রাহুল জাঠ ওরফে ভোলু (হরিয়ানার বাসিন্দা)কে গ্রেফতার করে।তার কাছ থেকে তিনটে ফোন উদ্ধার করে গুজরাট পুলিশ। যার মধ্যে একটি ফোন হাওড়ার খোয়া যাওয়া ফোন। এরপর গুজরাট পুলিশের কাছে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত।
খবর পাওয়ার পর জিআরপি হাওড়া, ও গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যে রাহুলকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য রওনা দিয়েছে।
এই রাহুল জাঠ প্রতিবন্ধী।তার একটি পায়ে সমস্যা রয়েছে। তাই সে ট্রেনের মহিলা থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন কামরায় অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। গুজরাট পুলিশ যতটুকু জানতে পেরেছে রাহুল প্রায়ই ট্রেনে করে যাতায়াত করে। তার একটি প্রতিবন্ধী কার্ডও রয়েছে। যার ফলে ট্রেনে যাতায়াত করতে তার অনেকটা সুবিধা হয়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তার বিরুদ্ধে ১৩টির বেশি মামলা রয়েছে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে যে, ট্রেনে সফর কালীন ট্রেনে যাত্রীরা যখন ঘুমিয়ে থাকত। তখনই রাহুল কাজ সারত। সামান্য মোবাইল, ঘড়ি, ল্যাপটপ,টাকা চুরি করার জন্য সে খুন করত। এই খুনের সংখ্যা তার কাছে কম নয়। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ৫টি খুন এবং ধর্ষণের মামলা রয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি চুরি ছিনতাইয়ের মত মামলা রয়েছে। তবে রেল সড়কে অপরাধে তার আর কি কি ভূমিকা রয়েছে? সেটা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
দেখতে একদম একজন সাদামাটা এবং প্রতিবন্ধী ।কোন ভাবেই তাকে দেখে বোঝা যায় না যে,সে কোন বড় অপরাধী। সামান্য মোবাইল ফোন চুরি করার জন্য রাহুল তবলা বাদককে খুন করেছে।তাকে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ইতিমধ্যেই হেফাজতে নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নিজেদের হেফাজতে আনার পর হয়তো আরো বেশ কিছু অপরাধের তথ্য জানতে পারবে গোয়েন্দারা।
তবে রাহুল যে অবসাদগ্রস্ত একজন ব্যক্তি। সেটা তার কথাবার্তা এবং শারীরিক ভঙ্গিমাতে অনেকটাই বোঝা যায়।
indinews24