কোলকাতা ডেস্ক :আমজাদ খান ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রভাবশালী ভিলেন এবং চরিত্রাভিনেতা, যিনি ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “শোলে” ছবিতে গব্বর সিং চরিত্রে অভিনয় করে সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার অভিনয়শৈলী এবং ক্যারিশমাটিক উপস্থিতি তাকে হিন্দি চলচ্চিত্রে ভিলেন চরিত্রে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। গব্বর সিংয়ের সেই বিখ্যাত সংলাপ “কিতনে আদমি থে?” ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে রয়েছে।
শৈশব এবং চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ
আমজাদ খানের জন্ম ১৯৪০ সালে পেশোয়ারে, যা বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত। তিনি অভিনেতা জয়ন্তের পুত্র এবং ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি মঞ্চ এবং চলচ্চিত্রে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে তেমন সাফল্য আসেনি। পড়াশোনা শেষ করে মুম্বাইয়ে এসে বিভিন্ন ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন।
“শোলে” এবং গব্বর সিং
১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “শোলে” চলচ্চিত্র আমজাদ খানের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ছবির পরিচালক রমেশ সিপ্পি প্রথমে গব্বর চরিত্রের জন্য অন্য অভিনেতাকে ভাবলেও পরে আমজাদ খানকে বেছে নেন। আমজাদ খান এই চরিত্রে এমনভাবে অভিনয় করেন যে তিনি দর্শকদের মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন। “শোলে” সিনেমাটি তার সময়ের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে এবং গব্বর সিং চরিত্রটি হিন্দি সিনেমায় একটি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়। এই চরিত্রে তার সংলাপ, উচ্চারণ এবং শারীরিক ভাষা ভিলেন চরিত্রকে এমন এক নতুন রূপ দেয় যা পরবর্তীতে বহু চলচ্চিত্রে অনুসরণ করা হয়।
অভিনয়শৈলী এবং বৈচিত্র্য
আমজাদ খান শুধুমাত্র খলনায়ক চরিত্রেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি অন্যান্য চরিত্রেও অভিনয় করেছেন, যা তার বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দেয়। তিনি হিন্দি সিনেমার ঐতিহ্যবাহী ভিলেন থেকে একধাপ এগিয়ে এমন সব চরিত্রে অভিনয় করতেন যেখানে ভিলেনের মধ্যে এক বিশেষ ক্যারিশমা এবং আকর্ষণ ছিল। উদাহরণস্বরূপ, “মুকাদ্দর কা সিকান্দর” সিনেমায় তিনি দিলীপ চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তাতে দর্শকরা ভিন্ন ধরনের একটি ভিলেন দেখতে পান। তার সংলাপ প্রক্ষেপণ এবং অভিনয়শৈলী তাকে অনন্য করে তুলেছিল।
অন্যান্য সিনেমায় অবদান
গব্বর সিং চরিত্রের পরও তিনি বহু সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেমন “যীশ দেশ মে গঙ্গা বহতি হ্যায়,” “লাভ অ্যান্ড গড,” এবং “কাসমে ওয়াদে।” তার প্রতিটি চরিত্রে তিনি নতুন কিছু যোগ করতেন, যা তাকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে তিনি অনেক জনপ্রিয় ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। তাছাড়া, কমেডি চরিত্রেও তার পারদর্শিতা ছিল অসাধারণ, যা তাকে আরও বেশি প্রিয় করে তোলে।
আমজাদ খানের ব্যক্তি জীবন এবং দৃষ্টিভঙ্গি
পর্দায় তার কঠোর এবং ভয়ঙ্কর চরিত্র সত্ত্বেও ব্যক্তিজীবনে আমজাদ খান ছিলেন অমায়িক এবং বন্ধুবৎসল। তার সহকর্মী এবং সহ-অভিনেতারা তাকে একজন সদালাপী এবং আন্তরিক মানুষ হিসেবে জানতেন। তিনি সবসময় তার অভিনয় দক্ষতা উন্নত করার চেষ্টা করতেন এবং ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইতেন। তার অসাধারণ অভিনয়শক্তি এবং নিষ্ঠা তাকে একটি পরিপূর্ণ অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মৃত্যুবরণ এবং উত্তরাধিকার
আমজাদ খান ১৯৯২ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার অকালমৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি বড় ক্ষতি ছিল। তবে তার অভিনয় আজও স্মরণীয় এবং তিনি ভারতীয় সিনেমায় একটি চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তার চরিত্রগুলো এবং বিশেষত গব্বর সিং চরিত্রটি আজও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়।
উপসংহার
আমজাদ খান শুধু একটি নাম নয়, বরং হিন্দি সিনেমার ভিলেন চরিত্রের এক প্রতীক। তার অভিনয়শৈলী, সংলাপ প্রক্ষেপণ এবং ব্যক্তিত্ব তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অমর করে তুলেছে। “শোলে” সিনেমার গব্বর সিং চরিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় তাকে একজন কালজয়ী অভিনেতায় পরিণত করেছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে, এবং তিনি সবসময় একটি প্রেরণা হিসেবে অভিনয় জগতে জায়গা করে রাখবেন।