দুর্গাপুরে শুক্রবারের সভা আসলে রাজনীতির মঞ্চ না, এক রূপকথার নাট্যমঞ্চ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উঠলেন, বাংলায় প্রণাম করলেন, বললেন “জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা”। রামনাম? সে যেন আজ ছুটিতে!
শমীক ভট্টাচার্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর থেকেই একটা পরিবর্তনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এবার তা স্পষ্ট—বঙ্গ বিজেপিকে ‘বাংলা’ বানানোর মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু। যাঁদের মুখে এতদিন শুধু রাম, এবার তাঁদের ঠোঁটে কালী, দুর্গা।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই—কালী-মায়ের নাম নিলেই কী ‘বাঙালি-বিরোধী’ তকমা ঘোচে?
মোদির আজকের ভাষণে একবারও উঠে এল না ভিনরাজ্যে বাঙালিদের হেনস্থার প্রসঙ্গ। যেটা তৃণমূল বারবার বলে—বাংলা বলার জন্য অপমানিত হতে হচ্ছে, কখনও বাংলাদেশি তকমা, কখনও আটক, কখনও চাকরি খোঁয়ানো। এসব প্রশ্নে চুপ প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু বাংলার মাটিতে বাংলায় মিষ্টি কথা—এতেই কি মুছে যাবে বছরের পর বছর জমে থাকা রাগ?
শুধু “বিকশিত বাংলা মোদির গ্যারান্টি” বললেই কি সেই বাঙালি আপন ভাববে, যারা দিলীপ ঘোষ বা শুভেন্দুর ভাষায় বারবার আঘাত পেয়েছে? যাদের মনে গেঁথে গেছে বিজেপির উগ্র, বহিরাগত হিন্দুত্বের মুখ?
তৃণমূল তাই খোঁচা মারছেই—“আপনি বাংলায় ভাষণ দিলেন তো ঠিক আছে, কিন্তু এবার ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে না তো?”
একটু বাস্তবেই ফেরা যাক—রামনবমীর শোভাযাত্রা দিয়ে ভোট আসে না, সেটা বুঝেই এখন কালী-দুর্গা আঁকড়ে ধরছে বিজেপি। কিন্তু এটা কি বিশ্বাসের অভ্যন্তরীণ রূপান্তর, না কি নিছক নির্বাচনী ফন্দি?
ভোটের আগে ‘বাংলায় বাংলা বলা’ আর ভোটের পরে বাংলায় ‘বাংলা বলার অপরাধে’ গালমন্দ—এই দ্বিচারিতা ভুলবে না বাংলা।