রাজ্যের রেল মানচিত্রে যুক্ত হল নতুন যোগাযোগ পথ। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া— এবার আর ট্রেন পাল্টানোর ঝক্কি নেই। বাঁকুড়া হয়ে সরাসরি মসাগ্রাম রুটে চালু হল লোকাল ট্রেন। শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি থেকে এই রুটের প্রথম যাত্রার সূচনা করলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং হাওড়ার তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরেই বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মানুষের দাবি ছিল— এমন একটি ট্রেন পরিষেবা, যা কোনও ট্রান্সফার ছাড়াই পৌঁছে দেবে হাওড়া। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটল অবশেষে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর। তখনই পুরনো ন্যারো গেজ রুটকে ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজ শুরু করে পূর্ব রেল। ২০০০ সালে শুরু হওয়া সেই কাজের প্রথম ধাপ শেষ হয় ২০০৫-এ, যখন মসাগ্রাম হয়ে বাঁকুড়া পর্যন্ত তৈরি হয় নতুন রেলপথ।
এরপর শুরু হয় ১১৮ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইনের বিদ্যুৎকরণ। ২০২১ সালের গোড়ায় শেষ হয় সেই কাজও। সব মিলিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা সেই প্রকল্পের ফসল আজকের নতুন ট্রেন পরিষেবা।
উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বার্তা দেন রেলমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘চিংড়িঘাটা, বেলেঘাটা, খিদিরপুর— এইসব জায়গায় রেলের প্রকল্পগুলি আটকে আছে রাজ্যের সহযোগিতার অভাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজনীতি নয়, রাজ্যের স্বার্থে রাজ্য সরকার যেন রেল প্রকল্পে সহযোগিতা করে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই অনুরোধ পৌঁছে দিন।’’
তবে রেলমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পাল্টা দেন তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রেলমন্ত্রী নিজেই রাজনৈতিক ভাষণ দিচ্ছেন। আমরা বহুবার আন্ডারপাসের দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কেন্দ্র ব্যবস্থা নেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী ছিলেন— কীভাবে রেল চলে, সেটা ওঁর থেকে ভালো কেউ জানে না।’’
নতুন রেলপথ যেমন যোগাযোগের দিক থেকে রাজ্যবাসীর জন্য মাইলস্টোন, তেমনই তার উদ্বোধন ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনের রাজনৈতিক সুরও জোরালো হয়ে উঠল।