মুম্বাই:অনলাইন প্রতারকদের দ্বারা ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর কাছে এক বৃদ্ধ মহিলা ১৪ লক্ষ টাকা প্রতারিত হয়েছেন৷
পুলিশে অভিযোগ অনুযায়ী, বৃদ্ধ মহিলা ১লা সেপ্টেম্বর একজন ব্যক্তি তাকে ফোন করে। যিনি নিজেকে দিল্লির সিবিআই আধিকারিক বলে নিজেকে পরিচয় দেন।
বৃদ্ধকে বলা হয় যে তিনি ডিজিটাল গ্রেফতার হয়েছেন। 67 বছর বয়সী এই মহিলাকে অনলাইন প্রতারকদের দ্বারা “ডিজিটাল গ্রেপ্তারের” অধীনে রাখা হয়। সাইবার অপরাধীরা একটি অস্তিত্বহীন মানি লন্ডারিং মামলায় তার নাম মামলা থেকে বাতিল করার বিনিময়ে তাকে ১৪লাখ টাকা দিতে বাধ্য করে।
সোমবার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্তকে দিল্লি টেলিকম বিভাগ এবং সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের কর্মী হিসাবে দাবী করেছিল, “একটি হাই-প্রোফাইল মানি লন্ডারিং মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তরা তাকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর অধীনে রাখে৷ অপরাধটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঘটেছিল৷ নির্যাতিতা তার আত্মীয়র সাথে মুম্বাইয়ের পশ্চিম কান্দিভালিতে থাকে,” ।তিনি জানান, শনিবার উত্তর অঞ্চল সাইবার থানায় তার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা শুরু করে পুলিশ৷ তাকে বলা হয়েছিল যে, তার বিরুদ্ধে দিল্লি সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত মহিলাকে বলেছে যে, অপরাধে তার আধার কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। অভিযুক্ত তখন তাকে তার সঙ্গীর সাথে কথা বলতে দেয়, যিনি সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসার রাকেশ কুমার বলে পরিচয় দেন।
ওই প্রতারকরা ” দিল্লি পুলিশের তিনটি ভুয়ো চিঠি দেখায়। এবং রাকেশ কুমার এবং একজন মহিলা অভিযুক্ত যিনি নিজেকে শোভা শর্মা বলে পরিচয় দেয়। বৃদ্ধার তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল হতে পারে,ও নানা সমস্যায় পড়তে পারে বলে ভয় দেখায়৷
ওই প্রতারকরা বৃদ্ধার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং ফিক্সড ডিপোজিট এবং তাকে ব্যাঙ্কে যা টাকা রয়েছে এবং তার সমস্ত তথ্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সমস্ত বিনিয়োগ জমা দিতে বলেছিল,” তিনি বলেছিলেন, ” শর্মার নির্দেশে, মহিলা ব্যাঙ্কে গিয়ে স্থায়ী আমানত, মিউচুয়াল ফান্ড গুলি ভেঙে দেয়। তারপর RTGS-এর মাধ্যমে প্রতারকদের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে 14 লক্ষ টাকা জমা দিয়ে দেয়,পরে বৃদ্ধ তার ছেলের সাথে কথা বলার পরে বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন, ” বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
একটি ডিজিটাল গ্রেপ্তার কি?
সাইবার-সিকিউরিটি এজেন্সি CERT-In-এর পরামর্শ অনুসারে, ডিজিটাল গ্রেপ্তার হল, এমন একটি বিষয়, যেখানে ভুক্তভোগীরা একটি ফোন কল, একটি ই-মেল বা একটি বার্তা পান।যেখানে অপর পক্ষ থেকে দাবি করে যে ,ভুক্ত ভোগীরা , নিজেদের পরিচয় ভাঁড়িয়ে, অর্থ পাচারের মতো অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সেই জন্য তদন্তের অধীনে রয়েছে তারা। ” ডিজিটাল প্রতারকরা শিকারকে গ্রেফতার বা আইনি ভয়ংকর পরিণতির হুমকি দেয়। যদি সে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেয়। তারা প্রায়ই যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা প্রতিরোধ করার জন্য আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে। প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের আস্থা দেয় যে,মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দিয়ে দেবে।তাহলে কোন অসুবিধা হবে না। তাই তদন্তে সাহায্য করবার জন্য বিভিন্নভাবে বোঝাতে শুরু করে ভুক্তভোগী কে। সেই সুবাদে ভিডিও কলে গ্রেপ্তার করে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রতারিতদের। তখন ব্যাংক একাউন্ট IFSC Code ,UPI নাম্বার সমস্ত কিছু জেনে নেয় ওই প্রতারকরা। এরপরই একটা বড় অংকের টাকা দাবি করে। সেই দাবি মত তারা টাকাটি নিয়ে নেয়। ভয়ে প্রতারিতরা টাকা প্রতারকদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠাতে বাধ্য হয়। এপর্যন্ত দেখা গেছে ,স্কাইপ নামে একটি ভিডিও অ্যাপের মাধ্যমে বেশিরভাগটাই এই ধরনের ডিজিটাল অ্যারেস্টের মত প্রতারণা চালিয়েছে প্রতারকেরা।