বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদে শমীক ভট্টাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দলের অন্দরে একের পর এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছিল। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ভাষণে বুঝিয়ে দেন—আগামী দিনে সংগঠনের মধ্যে থাকবে বড় রদবদল, এবং বিজেপির হিন্দুত্বের রাস্তাও হয়তো কিছুটা বদলাতে চলেছে। সেই সুরেই যেন এবার গেরুয়া শিবিরের পুরনো ও প্রভাবশালী নেতা দিলীপ ঘোষকে নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন শমীক। শনিবার তাঁর সাফ মন্তব্য, “দিলীপ ঘোষ ছিলেন, আছেন, থাকবেন। উনি কোথাও যাননি, যাবেনও না। দল যেখানে মনে করবে তাঁর প্রয়োজন, সেখানেই তাঁকে কাজে লাগানো হবে। তিনি কোনও সেলেবেল কমোডিটি নন।”
এই মন্তব্য সামনে আসতেই ফের একবার রাজ্য বিজেপির ভেতরে পুরনো বনাম নতুন গোষ্ঠীর টানাপোড়েন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কারণ, মাত্র দু’দিন আগেই শমীকের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান থেকে কার্যত বাদ পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। কারও মুখে তাঁর নামও শোনা যায়নি। সেই প্রেক্ষিতে শমীকের এই মন্তব্য কিছুটা মোচড় এনে দিল দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে।
এদিকে, শপথের ঠিক পরেই রাজ্য বিজেপির সদর দফতর মুরলীধর সেন লেনেও এক নজরকাড়া বদল ঘটেছে। সরিয়ে ফেলা হয়েছে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতার ছবি—নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা—কারও ছবিই আর নেই দেওয়ালে। তার বদলে বিশাল আকারে বসানো হয়েছে শুধুই পদ্মফুল, দলের প্রতীক। এই প্রসঙ্গে শমীক জানিয়ে দেন, “ব্যক্তি নয়, দল বড়। এটা আমাদের বিশ্বাস, আমাদের বার্তা।”
তবে শুধু দিলীপ ঘোষ বা দেওয়াল থেকে ছবি সরানোই নয়, শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কেও এক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে রাজনৈতিক তরঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করলেন নতুন সভাপতি। প্রশ্ন ওঠে, শুভেন্দুর ছবিও যখন সরানো হচ্ছে, তা কি কোনও বার্তা? উত্তরে শমীক বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না তিনি শুধু বিজেপির হৃদয়ে আছেন। তৃণমূলের হৃদয়েও আছেন। তারা দিনভর শুধু শুভেন্দু-শুভেন্দু করে যায়, এটাই প্রমাণ।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য শুধুই কথার খেলা নয়—বরং দলীয় স্তরে মতপার্থক্যের ইঙ্গিত। কারণ, হিন্দুত্বের প্রশ্নে আগেই শমীক ও শুভেন্দুর অবস্থান এক নয় বলে জানা গিয়েছে। একজন চাইছেন ‘সবকা সাথ’ মডেল, আরেকজন জোর দিচ্ছেন আগ্রাসী হিন্দুত্বে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে স্পষ্টভাবে দুটি ছবি ধরা পড়ছে—একদিকে গঠনমূলক পরিবর্তনের বার্তা, অন্যদিকে পুরনো গোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিয়ে দলে ভারসাম্য রাখার প্রয়াস। তবে এর পরিণতি কী দাঁড়াবে, তা সময়ই বলবে। আপাতত বঙ্গ বিজেপির অন্দরের এই টানাপোড়েনের রাজনীতি ঘিরে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল।