আজ দীঘায় তৈরি হল এক নতুন ইতিহাস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এবং তাঁর হাত ধরেই দীঘায় প্রথমবারের জন্য অনুষ্ঠিত হল জগন্নাথের রথযাত্রা। সকাল থেকেই শহরের রাস্তায় ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি, তৎপর প্রশাসন, আর ভক্তদের উচ্ছ্বাস।
সকালে ‘পাহান্ডি বিজয়’-এর মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। দেবতাদের রথে আরোহনের পর মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে স্বর্ণ ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করেন এবং পরে রথের দড়ি টেনে সূচনা করেন রথযাত্রার। তিনি বলেন, “শাস্ত্র নয়, মানুষ বুঝি”—ধর্মের সঙ্গে মানবিকতার মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল নিদর্শন তৈরি করে দিল আজকের দীঘা।
এই প্রথম দীঘার রথে অংশ নিতে শুধুমাত্র বাংলার নানান প্রান্ত থেকেই নয়, জাপান, রাশিয়া, ইউক্রেন থেকেও হাজির হয়েছিলেন শতাধিক বিদেশি ভক্ত। সকাল থেকে জগন্নাথ ধামের চত্বরে জমে ওঠে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনির ভিড়ে দীঘা যেন হয়ে উঠেছিল এক নবধর্মীয় উৎসবের পীঠস্থান।
প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের সমাগমের কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল নজরদারি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, ব্যারিকেড আর বিশাল পুলিশ বাহিনী। রথযাত্রার রুট নির্ধারণ, ‘মাসির বাড়ি’ পর্যন্ত পৌঁছনো এবং দর্শনার্থীদের চলাচল নিয়েও সরাসরি নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
রথযাত্রার আগের দিন বৃহস্পতিবার দীঘায় পৌঁছেই মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রস্তুতির খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেন। হোটেল থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।
আজকের এই আয়োজন শুধু ধর্মীয় অনুশ্ঠান নয়, দিঘাকে ঘিরে এক নতুন ভক্তিপূর্ণ পরিবেশের সূচনা—যেখানে ধর্ম, উৎসব ও মানুষের আবেগ মিলেমিশে তৈরি করল এক মহাউৎসবের আবহ। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এই রথযাত্রা মানুষকে কাছাকাছি আনে, বিভাজনের নয়, মিলনের উৎসব হোক এটি।”
এই ঐতিহাসিক দিনে মুখ্যমন্ত্রীর একটি হৃদয়স্পর্শী মুহূর্তও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়—দীঘার সমুদ্র সৈকতে একটি বাঁদরকে নিজের হাতে বিস্কুট খাইয়ে দেন তিনি। যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যেই।
এবার থেকে দীঘার রথযাত্রা হয়ে উঠবে শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং রাজ্যের এক নতুন সাংস্কৃতিক চিহ্ন।