উলটো রথের পরের দিন, ৫ জুলাই জগন্নাথ দর্শনের উদ্দেশ্যে পুরী পৌঁছন ইমন। বাড়িতে প্রভুর আরাধনার পরেই শুরু হয় এই বিশেষ সফর। ‘সুনাবেশ’ অর্থাৎ সেই মহামুহূর্ত যখন মহাপ্রভু সোনার অলঙ্কারে সজ্জিত হন— তার দর্শন পেয়েছেন ইমন। পেয়েছেন ‘অধরাপনা’রও সাক্ষাৎ— যেদিন মহাপ্রভুকে নিবেদন করা হয় শরবত বা ‘পানা’। তবে তৃপ্তির মাঝেও থেকে গেল একরাশ আক্ষেপ— ‘নিলাদ্রী বিজয়’ উৎসবে থাকতে পারছেন না। মঙ্গলবার দুপুরেই ফিরতে হচ্ছে কলকাতায়। আর সেদিনই মহাপ্রভু জগন্নাথদেব পুনরায় প্রবেশ করেন মন্দিরে।
পুরী পৌঁছনোর পথে একাধিক প্রতিকূলতা। ভুবনেশ্বর থেকে পুরী পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। গন্তব্য ছিল এক ঘণ্টার, কিন্তু তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। যে গাড়ি ভাড়া করেছিলেন, সেটি এক জায়গা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে ১৫০০ টাকায় টোটো, তারপর আবার অটো। ইমনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ট্যুর পার্টনার ‘বাপি আঙ্কেল’। বন্ধুরা অবশ্য একদিন আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন ট্রেনে। এরপর হোটেলে পৌঁছে একসঙ্গে জগন্নাথ দর্শনে বের হন সকলে।
তবে এত কষ্ট, এত যন্ত্রণার পরেও ক্লান্তি বা বিরক্তি নেই। বরং প্রতিটা মুহূর্ত জুড়ে রয়েছে একটাই ভাবনা— কবে দেখা হবে প্রভুর সঙ্গে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রভুর টানে এসেছেন পুরীতে। মাসির বাড়ি থেকে ফিরে এই ক’দিন রাস্তাতেই থাকেন জগন্নাথদেব। যেন গোটা পৃথিবীর ভক্তদের দর্শনের সুযোগ করে দিতেই মন্দির ছেড়ে বাইরে আসেন তিনি।
বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে লাখো ভক্ত যেভাবে ছুটে আসেন এক ঝলক প্রভুর দর্শনের জন্য— তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ইমন বলছেন, “এই কষ্টই আনন্দ। সেই তালিকায় আমিও একজন।”
তবে এবারের সফর তাঁর কাছে আরও বিশেষ, আরও ব্যক্তিগত। কলকাতা থেকে প্রভুর জন্য একটি শাড়ি কিনে এনেছিলেন ইমন। কীভাবে সেটা পৌঁছে দেবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কিন্তু সোমবার সকালে প্রভুর সামনে পৌঁছেই এক দৈতাপতির হাতে শাড়িটি তুলে দিয়ে বলেছিলেন, “একটু পরিয়ে দেবেন প্রভুকে?” এবং অবাক হয়ে দেখেন, প্রভুর গায়ে তাঁর দেওয়া শাড়িই! সেই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছেন ইমন— এক অপার তৃপ্তি নিয়ে।
তাঁর কথায়, “প্রভুর ইচ্ছা না হলে গাছের পাতাও নড়ে না। আজ আমি যা পেয়েছি, তা ওঁরই দয়া।”
পুরীর ভিড়, যাত্রার ক্লান্তি, ট্রাফিকের বিশৃঙ্খলা— সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এই সফর হয়ে থাকল এক নিবেদিত ভক্তের হৃদয়গ্রাহী জগন্নাথযাত্রা।