মৃত মানুষের আত্মাও রেশনের চাল তুলছে এবং বছরের পর বছর ধরে সেটা খেয়েও যাচ্ছে। ভূত প্রেতাত্মা নিয়ে যতই বিশ্বাস/ অবিশ্বাসের বিবাদ থাক, তবে এ রাজ্যে সাধারণ মানুষের থেকে ভূতের খাবারটাই অনেকটাই বেশি গুরুত্ব পূর্ণ। সেই ভূতের নামে সরকারি রেশন বরাদ্দ হয়। ভূত সেই রেশন কিনে নিয়ে যায়। ঠিক এই রকম একটি তথ্য প্রকাশ পেয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানায়। যদিও এই বিষয়ে রেশন ডিলার থেকে আরম্ভ করে , কারও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায়,নামখানার প্রতিমা প্রামানিক (৫৯)। মারা গেছেন বছর আড়াই তিনেক আগে। স্বামী অরবিন্দ প্রামাণিক। এখনো পর্যন্ত জীবিত রয়েছেন। ছেলে অশোক প্রামাণিক এলাকায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ নেতা গোছের। দলের সুবাদে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কাজ করে অশোক। নামখানা নিত্য গোপাল দাস নামে রেশন ডিলারের সঙ্গে যোগ সাজসে ,মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত মৃতা প্রতিমা প্রামাণিকের প্রতিমাসে রেশনের চাল তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার পরিবারের লোকজন। এই ঘটনা জানা জানি হওয়ার পরেই, এলাকার মানুষ জনের মধ্যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
নিত্য গোপাল দাস এলাকায় প্রভাবশালী মানুষ। দীর্ঘ্য দিনের রেশন ডিলার। রেশনের কমিশন ছাড়াও গ্রাহকদের কাছ থেকে রেশন দোকানে বসেই,কুড়ি টাকা কেজি দরে চাল কিনে নেন নিত্য বাবু।সেই চাল বিক্রি করে মাস গেলে ভালই আর্থিক মুনাফা করেন তিনি। যার ফলে, তার উপরে কথা বলে কে? যেখানে প্রতিমা প্রামানিকের ভোটার লিস্টে নাম বাদ হয়ে গেছে। সেখানে নিত্যগোপাল বাবু অনায়াসেই মৃত প্রতিমার মাসে ৫ কেজি করে খাদ্য শস্য এবং মাসে পরিবার পিছু ১৫ কেজি করে আয়লা চাল দিয়ে চলেছেন।
স্থানীয় মানুষদের বক্তব্য, নিত্য গোপাল বাবু এইভাবে বহু মৃতের চাল দিয়ে চলেছেন। মৃত প্রতিমার ছেলে অশোক এবং নিত্যগোপাল, প্রতিমাকে অসুস্থ, বিছানা শয্যা দেখিয়ে, এখনো পর্যন্ত তার চাল যথারীতি সরকারের কাছ থেকে চুরি করছে এবং গ্রহণ করছেন। মৃতার ছেলে অশোক প্রামাণিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি স্বীকার করে নেন যে,” মা মারা গেছেন কিছুদিন আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত রেশনের চাল তুলছি সত্যি কথা।অভাবের সংসার তাই।”
এখনো পর্যন্ত গ্রামে গঞ্জে রেশন ডিলারদের সহ.যোগিতায় বহু মৃত মানুষের রেশনের সরবরাহ করা খাদ্যদ্রব্য পাচার হচ্ছে। এই অভ্যাস কোন ভাবে বদলানো যাচ্ছে না। খাদ্য দপ্তর এক আধিকারিক বলেন যে,”পস মেশিন হওয়ার ফলে রেশন ডিলারদের রোজগারটা অনেকটাই কমে গেছে। তাই রেশন ডিলাররা এদিক ওদিক করে যতটুকু রোজগার করা যায়, সেটাই করছে।
সবের ওপর মৃত মানুষেরা রেশনের চাল তুলছে। খাদ্যদ্রব্য খাচ্ছে এবং নিয়মিত রেশন ডিলারদের দেখা করছে। এদিকে আবার বিজ্ঞান মঞ্চ বলছে,” ভূত নেই ভূত নেই”।
