দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের দেব নগরের গৃহবধূ কাকলি মাইতি তাঁর জীবনের নির্মম অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলেছেন। অভিযোগ, স্বামী অনুপ মাইতি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়ে এসেছে। সংসার টিকিয়ে রাখার আশায় বছরের পর বছর নীরবে সব সহ্য করেছেন তিনি। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
গত ৮ই জুন রাতে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায়। কাকলির অভিযোগ, সেদিন স্বামী অনুপ মাইতি তাঁকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় মাঝরাতে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। অসহায় অবস্থায় তিনি নামখানা থানায় আশ্রয় নেন। পুলিশ তাঁকে দ্বরীকনগর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং একটি মামলা (নম্বর ১২৮/২৫) রুজু করে। কিন্তু সংসার বাঁচানোর আশায় কাকলি নিজেই পরে কাকদ্বীপ মহকুমা আদালত থেকে স্বামীর জামিন করিয়ে আনেন।
কাকলির বক্তব্য, সংসারের উন্নতির জন্য মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে তিনি এক লক্ষ টাকা এবং তাঁর মা সন্ধ্যা মণ্ডল আরও এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্বামীর হাতে তুলে দেন। অনুপ সেই টাকা ব্যবসায় লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরবর্তীতে কিস্তি ফেরত দেননি। ফলে ঋণের ভার পড়ে কাকলির ঘাড়ে, শুরু হয় নতুন করে অশান্তি। সমবায় ব্যাংক ও গোষ্ঠীর তরফে টাকা ফেরতের জন্য চাপ বাড়তে থাকে। অসহায় কাকলি তখন স্থানীয় তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু তোলার কাছে যান সমাধানের আশায়।
কিন্তু এখানেই গল্পে আসে নতুন মোড়। কাকলির অভিযোগ, ওই রাজনৈতিক নেতা সংসারের সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়ে তাঁকে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে চাপ দিতে থাকেন। “আমি রাজি না হওয়ায় উনি আমাকে হুমকি দেন, অনুপকে দিয়ে যা করাতে হয় করে দেবেন,” কাঁদতে কাঁদতে জানান কাকলি। তাঁর দাবি, সেই হুমকির পর থেকেই জীবনে একের পর এক বিপর্যয় ঘটছে।
বর্তমানে কাকলি বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষের মামলাও করেছেন, কিন্তু এখনো আদালত থেকে কোনো নির্দেশ আসেনি। “গায়ের সোনা বিক্রি করে দশ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। তার মধ্যে ছয় হাজার উকিলকে দিয়েছি, বাকি চার হাজার ছেলে-মেয়ের স্কুলের খরচে গেছে। এখন দুবেলা খাবার জোটানোই কঠিন,” বলেন তিনি, কান্নাভেজা কণ্ঠে।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত নেতা কৃষ্ণেন্দু তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি ওই পরিবারের সমস্যা সম্পর্কে জানি এবং মধ্যস্থতা করেছি, কিন্তু অন্য কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
কাকলি সোমবার সুন্দরবন জেলার এসপিকে ইমেইলের মাধ্যমে বিস্তারিত অভিযোগ জানান। পরের দিন সকালেই নামখানা থানার পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কাকলির অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে রাজনৈতিক নেতার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিতে চাপ দেয়।
এই ঘটনা সমাজে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে — একজন নারী কি এখনও নিজের ন্যায়বিচার পেতে হলে শরীরের বিনিময়েই তা অর্জন করতে হবে? কাকলি মাইতির কাহিনি শুধু একটি পরিবারের নয়, সমাজের সেই নির্মম বাস্তবতা যেখানে নারী মর্যাদা ও নিরাপত্তা এখনও পুরুষতান্ত্রিক চাপে পিষ্ট। প্রশাসন ও সমাজ যদি এবারও নীরব থাকে, তবে এই ন্যায়বিচারের লড়াই আরও দীর্ঘ হবে।


