বুধবার দেশজুড়ে ডাকা ধর্মঘটের বিরোধিতায় কড়া অবস্থান নিল রাজ্য সরকার। অর্থ দফতর সোমবার এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে, ধর্মঘটের দিন রাজ্যের সমস্ত সরকারি দফতর খোলা থাকবে এবং কর্মীদের স্বাভাবিক কর্মদিবসের মতোই উপস্থিত থাকতে হবে। কোনও ধরনের ছুটি নেওয়ার অনুমতি থাকবে না। এমনকি ক্যাজ়ুয়াল লিভ বা হাফ ডে ছুটিও দেওয়া হবে না।
যদি কোনও সরকারি কর্মী ধর্মঘটের দিন অনুপস্থিত থাকেন, তবে তাঁর এক দিনের বেতন কাটা যাবে এবং দিনটিকে কর্মজীবনের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে অনুপস্থিতির কারণ জানতে পাঠানো হবে কারণ দর্শানোর নোটিস। উত্তর সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হতে পারে। অর্থ দফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে হবে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি ব্যতিক্রমী অবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে, যার আওতায় ছাড় মিলতে পারে। যেমন, কেউ যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন, কোনও নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু ঘটে, অথবা কেউ ৮ জুলাইয়ের আগেই গুরুতর অসুস্থতার কারণে ছুটিতে চলে থাকেন, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণ পেশ করলে তাঁর অনুপস্থিতিকে বৈধ ধরা হবে। একইসঙ্গে আগেই মঞ্জুর হওয়া মাতৃত্বকালীন ছুটি, চিকিৎসা-সংক্রান্ত ছুটি বা চাইল্ড কেয়ার লিভ থাকলেও তাতে ছাড় দেওয়া হবে।
এই সিদ্ধান্তে ফের একবার স্পষ্ট হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধ-বিরোধী অবস্থান। বিরোধী নেত্রী থাকার সময় থেকেই তিনি ধর্মঘটের রাজনীতি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। ২০০৮ সালের পর তিনি নিজে আর কোনও বন্ধ ডাকেননি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রশাসন সচল রাখতে ধর্মঘটের দিন দফতর খোলা রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন।
এবারের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশের ১০টি শ্রমিক সংগঠন, মূলত কেন্দ্রের নতুন শ্রম কোডের বিরোধিতা করে। তাঁদের আশঙ্কা, এই কোড কার্যকর হলে শ্রমিকেরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। পাশাপাশি বেসরকারিকরণের বিরোধিতা, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বদলে স্থায়ী নিয়োগের দাবিও জানানো হয়েছে। ধর্মঘট ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ থাকলেও, রাজ্য সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে— অফিস খোলা থাকবে, হাজিরা বাধ্যতামূলক।