তাঁর বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দলাই লামা জানালেন, এখনও থেমে যাওয়ার সময় আসেনি। বরং আরও ৩০-৪০ বছর তিনি বেঁচে থাকবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন নিজেই। তবে সেই আশার আলোয় ছায়া ফেলছে এক বিতর্ক— কে হবেন তাঁর উত্তরসূরি? আর সেই নিয়েই ফের তপ্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতি, মুখোমুখি ভারত ও চিন।
আগামীকাল ৯০তম জন্মদিন পালন করবেন বৌদ্ধ ধর্মগুরু তেনজিং গ্যাতসো ওরফে দলাই লামা। তার ঠিক আগেই হিমাচলের ধর্মশালার ম্যাকলিয়োদগঞ্জে দলাই লামা মন্দিরে আয়োজিত হয় দীর্ঘায়ুর প্রার্থনা অনুষ্ঠান। সেখানেই তিনি বলেন, “আভালোকিতেশ্বরের আশীর্বাদে আমি নিশ্চিত, অন্তত আরও ৩০-৪০ বছর আমি মানুষের উপকারে বেঁচে থাকতে পারব।” পাশাপাশি অতীত নিয়ে কিছুটা আক্ষেপের সুরেও জানালেন, দেশ হারিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কষ্ট আজও ভুলতে পারেননি।
কিন্তু বিতর্ক শুরু অন্য জায়গা থেকে। কে হবেন তাঁর উত্তরসূরি? এই প্রশ্ন ঘিরেই ফের দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে চিন ও ভারত। চিনের হুঁশিয়ারি, আগামী পঞ্চদশ দলাই লামা নির্বাচনে তাদের অনুমোদন লাগবেই। পালটা জবাব দলাই লামার— “আমার উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার অধিকার গাহদেন ফোড্রাং ট্রাস্টের। বাইরের কোনও শক্তিকে এতে হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হবে না।”
এই মন্তব্য ঘিরে সরগরম রাজনৈতিক মহল। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও স্পষ্ট বলেন, “দলাই লামার উত্তরসূরি বাছাই করবেন তিনিই ও তাঁর ট্রাস্ট। সরকার বা অন্য কারও কিছু বলার নেই।” এরই মধ্যে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং ভারতের বক্তব্যকে “সীমা লঙ্ঘন” বলেই তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। পালটা রিজিজুর জবাব, “আমি কোনও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। আমি একজন ভক্ত। দলাই লামার উপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”
এই রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক তরজার মাঝেই নিজের জন্মদিনের প্রাক্কালে ভবিষ্যতের আশ্বাস দিলেন দলাই লামা। তাঁর ভাষায়, “আমি সব সময় মানুষের ভালোর জন্য কাজ করেছি। যতদিন বাঁচব, এই কাজ চালিয়ে যাব।” একদিকে আধ্যাত্মিক বার্তা, অন্যদিকে রাষ্ট্রনৈতিক চাপানউতোর— এই দ্বৈত আবহেই এবার ৯০ বছরে পা রাখছেন বিশ্ববন্দিত এই তিব্বতি ধর্মগুরু।