আইআইটি খড়গপুরে রবিবার মানেই যেন অভিশপ্ত। আবারও আইআইটি খড়্গপুরের ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। ব্যাপক শোরগোল। রবিবার (৪ মে) ভোরে আইআইটি খড়্গপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। তিনি আইআইটি খড়্গপুরের মদন মোহন মালব্য হলের SDS ব্লকের ১৩৫ নম্বর রুমে থাকতেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। শনিবার রাত থেকেই আসিফের রুমের দরজা লাগানো ছিল বলে পুলিশ ও আইআইটি খড়্গপুর সূত্রে জানা গেছে। সহপাঠীরা বারবার দরজা খোলার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হন, তখনই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। ভোর সাড়ে তিনটা নাগাদ আইআইটি ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা হিজলি ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে রুমের দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত যুবক বিহারের শিওহর জেলার গারাহিয়ার গ্রামের বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ ও IIT কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, পরিবারের সদস্যরা রওনা দিয়েছেন খড়গপুরের উদ্দেশ্যে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ‘আত্মহত্যা’ হলেও, ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক আধিকারিক।
আইআইটি সূত্রে জানা যায়, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্র ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছিলেন। তারপর হঠাৎ কেন এ সিদ্ধান্ত তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে! জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, আসিফ ভিডিও কলে দিল্লির এক তরুণীর সাথে কথা বলতে বলতেই আত্মহত্যা করেন। ওই তরুণীই আইআইটি কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। তারপরই আইআইটির নিরাপত্তাকর্মীরা এবং সহপাঠীরা বারবার দরজা খোলার চেষ্টা করেন। তাঁরা ব্যর্থ হওয়ার পরই খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে এবং দ্রুত খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। তবে, চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের মতামত নিয়ে দেহের ময়নাতদন্ত হবে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল বা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। সেই সূত্র ধরেই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” পুলিশের অনুমান, দিল্লির ওই তরুণীর সঙ্গে আসিফের প্রণয়ঘটিতে বা প্রেমগঠিত সম্পর্ক ছিল। কোন কারণে মনে আঘাত পেয়েই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসিফ!
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, পশ্চিম মেদিনীপুরের খুকুড়দহের বাসিন্দা (থাকতেন কলকাতায়) বছর ২১ এর পড়ুয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এরপর, ২১ এপ্রিল, রবিবার রাত্রি ১০টা নাগাদ আরও এক ওশিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড নোভাল আর্কিটেকচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী পড়ুয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় জগদীশচন্দ্র বসু হলের সি-২১৪ নম্বর রুম থেকে। ফের এক মেধাবী ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আইআইটি খড়্গপুর ক্যাম্পাসে। এদিকে, একই বছরের চার মাসের মধ্যেই তিন তিনজন মেধাবী পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলা তথা রাজ্য জুড়ে।